নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। যাঁর হাত ধরে বাংলাদেশে এসেছে বহুদলীয় গণতন্ত্র। তাঁর সময়েই নানান মতের মানুষের গঠিত দল রাজনীতি করার সুযোগ পায়। আজ তাঁর ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী১৯৮১ সালের আজকের এই দিনে (৩০ মে) বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একদল বিপথগামী সৈন্যের গুলিতে নিহত হন রাষ্ট্রপতি জিয়া। বিএনপি এই দিনটিকে ‘শাহাদাত দিবস’ হিসেবে পালন করে। গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এবার বিএনপি কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যে দলের প্রতিষ্ঠাতাকে স্মরণ করবে। এ জন্য ঘোষণা করা হয়েছে আট দিনের নানান কর্মসূচি।ইতিহাস থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠনের পর দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান সেই নিয়ম বাতিল করে সব রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার ব্যবস্থা করেন। নির্বাচনব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি দেশকে দ্রুত রাজনীতির গণতন্ত্রায়নের দিকে নিয়ে যান। এরই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষিত সব রাজনৈতিক দলকে তাদের কার্যক্রম চালানোর পদক্ষেপ নেন।একইভাবে সংবাদপত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, তথ্যের অবাধ প্রবাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি রাজনীতিতে যোগদান করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে একদল বিপথগামী সেনা সদস্য হত্যা করেন। ওই বছরের ৭ নভেম্বর ‘সিপাহি-জনতার বিপ্লবের’ পর রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ এস এম সায়েমের নেতৃত্বে উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেন। পরে ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে প্রধান করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠা করেন।ছয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনে তিনি ৭৬.৬৭ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১৯৭৮ সালের ২১ এপ্রিল শপথ নেন। পরে তিনি ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন।
জিয়াউর রহমান সম্পর্কে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন। অন্য দলগুলোকে রাজনীতি করার অনুমতি দিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশকে ভারতীয় আধিপত্যবাদ থেকে বের করে নিয়ে আসার বা মুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চায় কিন্তু আধিপত্যবাদ চায় না। সেই জায়গা থেকে দেশকে আধিপত্যবাদ থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। একই সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখেছিলেন। তাঁর অনেক কাজ আছে যার জন্য দেশের মানুষের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় তিনি।’
এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘বর্তমান বিএনপি তাঁর (জিয়াউর রহমানের) অনেক নীতি অনুসরণ করে না। জনগণের মন জয় করতে হলে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে হবে। দেশের মানুষ কী চায় সে অনুযায়ী রাজনীতি করতে হবে। যেটা জিয়াউর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন এবং সে অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করেছিলেন।’
জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী পালনে বিএনপির আট দিনের কর্মসূচি
প্রতিবছর দিনটি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী হিসেবে পালন করে বিএনপি এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এই বছর এ উপলক্ষে টানা আট দিনের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে আলোচনাসভা, পোস্টার ও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, কালো ব্যাজ ধারণ, কালো পতাকা উত্তোলন, জিয়ার কবরে ফুল দেওয়া ও ফাতেহা পাঠ, দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য ও বস্ত্রসামগ্রী বিতরণ।
গত ২৬ মে থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি চলবে ২ জুন পর্যন্ত। কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনাসভা করেছে বিএনপি। এতে জ্যেষ্ঠ নেতা ও বিশিষ্টজন বক্তব্য দেন।
দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ৬টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে শেরেবাংলানগরে জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং মসজিদে-মসজিদে গণদোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। দুপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ করা হবে। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা এ সময় উপস্থিত থাকবেন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়াও সারা দেশে জেলা-উপজেলা, থানা-পৌর ইউনিটগুলোও জিয়াউর রহমান স্মরণে আলোচনাসভা, দুস্থদের মধ্যে খাবার, বস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।